গৌরনদী প্রতিনিধি ॥ বগুড়া সদর থানা এলাকার নাজনীন আক্তার (২৪) নামে এক যুবতিকে প্রতারনামূলক বিয়ে করে গৌরনদীতে এনে হত্যার পর লাশ গুম করেছে সাকিব হোসেন নামের এক সেনা সদস্য। এ ঘটনায় পুলিশ ওই সেনা সদস্যকে গ্রেফতার করে হন্যে হয়ে যুবতীর লাশ খুজছে। ফেইসবুকে পরিচয়ের সূত্র ধরে যোগাযোগ, প্রেম, প্রতারনা ও সর্বশেষ হত্যাকান্ডের শিকার হলেন ওই যুবতী। নিহত যুবতীর স্বজন, পুলিশ ও খুনীর দেয়া বর্ননা সূত্রে জানাগেছে, বগুড়া সদর থানার সাবগ্রাম উত্তরপাড়া এলাকার মুদি ব্যবসায়ী আব্দুল লতিফ প্রামানিক এর যুবতী কন্যা নাজনীন আক্তার (২৪) এর সাথে প্রায় দুই বছর পূর্বে ফেইসবুকে পরিচয় হয় বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার আগরপুর ইউনিয়নের চর উত্তর ভূতেরদিয়া এলাকার নতুন জাহাপুর গ্রামের ভ্যানরিক্সা চালক আব্দুল করিম হাওলাদারের ছেলে ও বগুড়া সেনানিবাসে কর্মরত সেনা সদস্য সাকিব হোসেনের। এ পরিচয়ের এক পর্যায়ে পরিবারের সদস্য ও নিজ বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের না জানিয়ে গত ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সাকিব নাজনীনকে গোপনে বিয়ে করে। ফেইসবুকে পরিচয় হওয়ার পর সাকিব নাজনীন ও তার পরিবারকে জানায় তার বাবা বড় ব্যবসায়ী, তাদের চারতলা বাড়ি আছে। বিয়ের সময় প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে সাকিব তাদের বিয়ের কাবিননামায়ও ভুল নাম এবং ভূয়া ঠিকানা ব্যাবহার করে। বিবাহিত জীবনের বছর ঘুরতে না ঘুরতেই তাদের মধ্যে কলহ বাধে। এ কলহের এক পর্যায়ে গত ২৪মে বেলা ১১টার দিকে সাকিব নাজনীনকে ফোন করে বলে আমার বাবা খুব অসুস্থ্য, বাড়িতে যেতে হবে। আমি অফিস থেকে ছুটি নিয়ে বগুড়ার গোদাগড়া চারমাথা বাসষ্ট্যান্ডে আসছি, তুমি ওখানে আসো। তোমাকে আমি সাথে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে যাব। নাজনীনের ভাই আহাদ তখন ওই বাসষ্ট্যান্ডে নিয়ে গিয়ে নাজনীনকে সাকিবের হাতে তুলে দেয়। ওই দিন রাত থেকে তারা নাজনীন ও সাকিবের মোবাইল বন্ধ পায়। এরপর তারা সাকিবের মায়ের মোবাইলে ফোন দেয়। ওই ফোনটি বাজলেও কেউ রিসিভ করেনি। ঘটনার দুইদিন পর সাকিব ফোন করে নাজনীনের বাবাকে বলে আপনার মেয়ে পালিয়ে গেছে। নিশ্চয়ই আপনার কাছে গেছে আমার স্ত্রীকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিন। পরে এ ঘটনা নাজনীনের পিতা আব্দুল লতিফ প্রামানিক বাদি হয়ে গত ২৬ মে বগুড়া সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এরপর তিনি বগুড়া সেনানিবাসের উর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাদেরকে ঘটনা অবহিত করেন। তারা তখন সাকিবের ছুটি বাতিল করে দ্রুত তাকে কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ দেয়। নির্দেশ পেয়ে সাকিব তার কর্মস্থলে যোগদান করে। পরে সেনাকর্মকতাদের জিজ্ঞাসাবাদে নাজনীন খুনের ঘটনা বেড়িয়ে আসে। সেনাকর্তৃপক্ষ তখন সাকিবকে চাকরিচুত করে বগুড়া সদর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। হত্যাকারী সেনা সদস্য সাকিব হোসেন জানান, বগুড়া থেকে বাসযোগে নাজনীনকে নিয়ে সে ওইদিন রাতে গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর বন্দর সংলগ্ন হরহর গ্রামের মোঃ সালাউদ্দিন বেপারীর ভাড়া দেয়া টিনের ঘরে তার ভ্যানরিক্সা চালক বাবার ভাড়া বাসায় ওঠে। সাকিবের এ দরিদ্র অবস্থা দেখে নাজনীন ক্ষিপ্ত হয়। তার সাথে প্রতারণা করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে নাজনীন সাকিবকে গালীগালাজ করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে এক পর্যায়ে সাকিব ওইদিন রাত ১১টার দিকে একটি লাইলন দড়ি দিয়ে নাজনীনের পেছন থেকে গলায় প্যাচ মেরে তাকে বিছানায় ওপর ফেলে দেয়। এরপর সে বালিশ চাঁপা দিয়ে নাজনীনকে হত্যা করে। এরপর রাত দেড়টার দিকে সে নাজনীনের লাশ ওই বাড়ির সেপটিক ট্যাঙ্কের মধ্যে ফেলে দেয়। গৌরনদী মডেল থানা সূত্রে জানাগেছে, সাকিবের দেয়া বর্ননা অনুযায়ী সেপটিক ট্যাংকের ভেতর থেকে নাজনীনের লাশ উদ্ধারের জন্য বগুড়া সদর থানার ওসি (তদন্ত) মোঃ আবুল কালাম আজাদ, এসআই মোঃ গোলাম মোস্তফা, এএসআই মোঃ উজ্জল হোসেন সঙ্গীয় ফোর্সসহ হত্যাকারী সাকিবকে সঙ্গে নিয়ে সোমবার রাতে গৌরনদী মডেল থানায় এসে পৌছেন। এরপর গৌরনদী মডেল থানা পুলিশের সহয়তায় তারা মঙ্গলবার ভোরে লাশ উদ্ধারে অভিযানে নামেন। সাকিবের দেয়া বর্ননা মোতাবেক সেপটিক ট্যাংকের ভেতরের পানি সেচ করে সেখানে একজনের দুটি নখ ও শরীরের চামরার কিছু অংশ পাওয়া যায়। নাজনীনের লাশের কোন হদিস মেলেনি। মঙ্গলবার সকাল ১০টায় সরেজমিন ঘটনাস্থলে দিয়ে দেখাগেছে, সাকিব গ্রেফতার হওয়ার খবর পেয়ে তার পিতা-মাতাসহ পরিবারের সকল সদস্য ওই ভাড়া বাসা ছেড়ে গাঁ ঢাকা দিয়েছে। পুলিশ তাদেরকে গ্রেফতার ও নাজনীনের লাশ উদ্ধারে হন্যে হয়ে ওই এলাকা চষে বেড়াচ্ছে। গৌরনদী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আফজাল হোসেন জানান, আমরা নাজনীনের লাশ উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রেখেছি। সাকিরের পিতা-মাতাসহ পরিবারের সদস্যদেরকে গ্রেফতার করা সম্ভব হলে নাজনীনের লাশের সন্ধান পাওয়া যাবে বলে ধারনা করছি।
Leave a Reply